সুরঞ্জিত নাগ :
মাথায় লাল ক্যাপ, গায়ে টি-শার্ট ও পরনে জিন্স প্যান্ট। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি নিয়ে বাপ্পা দিঘির পাড়ে বসে বাদাম চিবুচ্ছে। দেখছে সাদা একদল হাঁস ঘুরছে আর মাথা ডুবিয়ে খুঁজছে আর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
পশ্চিম পাড়ে তাকাতে বাপ্পার চোখের আলো ঝাপসা হয়ে গেল, দৃষ্টি যেন স্থির হয়ে গেল। দুটি শালিক গলায় গলায় কোলাকুলি, ঠোঁটে ঠোঁটে ঠুকাঠুকি, একটি আরেকটির গায়ে লাফিয়ে উঠছে আর নামছে। আর ঘোঁ ঘোঁ শব্দ করছে। কে যেন গাছের ডাল নাড়তে উড়ে গেলে পাখি দুটি দু-দিকে। ইস্… কেন!
আমার চোখের পাতা দুটি লাগতে চাচ্ছিল না। পাতা দুটি মনে হচ্ছিল ফুলে গেছে। একটু নড়েচড়ে বসলাম।
বাদাম বিক্রেতা মিরাজ বলছে ‘স্যার বাদামতো শেষ আপনি হাত দিয়ে কি খোঁজেন? ও-তাই তো! দে আরো ১০টাকার বাদাম। আচ্ছা স্যার ‘সবাই এপাড়ে ওপাড়ে আপনি দেহি ওই ঘাটেই বইয়া থাকেন ফ্যাল ফ্যাল কইরা থাকেন ফ্যাল ফ্যালাইয়া তাকান আর হাসেন, বিড়-বিড়াইয়া কি কন কিচ্ছু বুঝি না’ এই বাদাম… এই বাদাম…
আসলে জীবন বলতে যা বোঝায় তা বোধ হয়ে আছে সেই দূরান্বিত শূণ্য। তার বাইরে অর্থাৎ বাস্তবে যে জীবন তারা যাপন করে চলছে আসলে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। সেই ঝুমু ঠিকই আছে, বাড়ির মধ্যে আছে ঝি-চাকর। কিন্তু তারা যেন সবই ভুতুড়ে মানুষ। আসলে তাদের যেন কোনো অস্তিত্ব নেই।
বাপ্পা প্রায়ই বিজয়সিংহ দিঘী ও দিঘীর পাড়ে বনে বেড়াতে যায় এবং সে বনের নির্জনতা ও রহস্যময়তাকে উপভোগ করে। যাবার পথে হেমন্তের বাদামি ঝরা পাতা মাড়িয়ে যায়, বসন্তের গোলাপ কুড়িয়ে নেয় হাতে। সে নিজেও যেন বইয়ে পড়া গোলাপ ফুল কুড়াতে থাকা কোনো নারী চরিত্র মাত্র। একটা ছায়া বা বাস্তবের কাল্পনিক প্রতিকীরূপমাত্র। কোনো বস্তু নেই তার মধ্যে, নেই কোনো প্রাণের স্পর্শ।
বাপ্পা আর ঝুমুর জীবনযাপন ছিল, মাকড়সার মতো এক অন্তহীন জাল বুনে চলা, সব সময় একখন্ড চেতনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে চলা। আর সে-সব গল্প শুনে চলা যা একেবারে অর্থহীন।
আজকালকার যুবক-যুবতীরা যা বলে, ঝুমুর কথাও হল তাই। তাদের মধ্যে জগৎ ও জীবনে সব সত্যই তাৎক্ষনিক। প্রতিটি মুহুর্তের মধ্যে কিছু না কিছু সত্য আছে। অথচ প্রতিটি মুহুর্তে স্বতন্ত্র, স্বয়ংসিদ্ধ, একটির পর একটি করে পরপর বয়ে চলেছে; কিন্তু কারো সঙ্গে কারো কোন সম্পর্ক নেই।
স্বাভাবিকতায় পুরুষের নির্বাচিত নারীর সাথে মেলামেশা করে। যাদের সঙ্গে সুক্ষèনিবিড় অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের কাছে নিজেদের সমর্পন করে। কেউ আবার ভালোবাসাবাসি বা শরীর-সংসর্গের কাজটাকে এক আদিম ন্যাক্কারজনক ব্যাপার মনে করে। আবার ভাবে কোনো পুরুষ তার জীবনে এলো মানে ব্যক্তিগত শুচিতা ও অন্তর্জীবনের স্বাধীনতার সীমা কারো অনধিকার প্রবেশের দ্বারা লঙ্ঘিত হল। কারণ তারা নারী বলে তারা মনে মনে ভাবে তাদের নারীজীবনের সকল মর্যাদা ও অর্থ শুধু অবাধ স্বাধীনতার মধ্যে নিহিত আছে।
ফেনীতে আসার পর দ্বিতীয় বছরে শীতকালে ঝুমুর বাবা একবার এসে বললেন- অবস্থার দ্বারা বাধ্য হয়ে তুমি নিশ্চয় আধাকুমারী অবস্থায় জীবন কাটাবে না?
ঝুমু স্পষ্টভাবে উত্তর দিল, আধাকুমারী? কেন, কেন নয়?
নারীরা এর থেকে বৃহত্তর ও মহত্তর একটা কিছু চায়। নারীদের পূর্ণ স্বাধীনতা যে-কোনো যৌনভিত্তিক প্রেমের অনেক বেশি সুন্দর ও আশ্চর্য্যজনক।
নারীরা পুরুষদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। একজন ক্ষুধার্ত পুরুষ শিশুর মতোই অশান্ত অবুঝ। তখন তারা যা চায় নারীদের তাই দিতে হয় তাদের শান্ত করার জন্য। শিশুদের মতোই তখন পুরুষগুলো এমন উন্মত্ত হয়ে ওঠে যে তারা নরনারীর মধুর সম্পর্কটাকে অহেতুক নোংরা করে তোলে। কিন্তু একজন নারী তার অন্তর্জীবনের স্বাধীনতা বিসর্জন না দিয়েও কোনো পুরুষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে। অথচ কবিরাও যৌনবিজ্ঞানের লেখকরা একথাটা ভালো করে ভেবে দেখেননি।
কুমিল্লায় ঝুমুর বাপের বাড়িতে বেড়ানোর সময় একই কথা বলল তার বাবা, বলল আমার মনে হয় এভাবে আধাকুমারী থাকাটা ঝুমুর পক্ষেই নিশ্চয়ই শোভা পাবে না।
ঝুমুর বাবা বলল, ‘সে তো আর রোগাপটকা ছোট একটা মেয়ে নয়, হাড় শক্ত বলিষ্ঠ চেহারার সে এক যুবতী’
ঝুমু প্রথমে পুনরাবৃত্তি করে বলল আধাকুমারী! তারপর কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে রাগে লাল হয়ে উঠল, রুষ্ট হয়ে বলল, ‘সেই সঙ্গে নিস্কলঙ্ক নিশ্চয়?
কোনো একজন নারী নিজেকে বিলিয়ে না দিয়েও কোনো পুরুষকে গ্রহণ করতে পারে। সে পুরুষের প্রভাবের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেয় না; বরং সে যৌন সংসর্গের ব্যাপারটাকে কৌশলগত এক পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষের উপর আপন প্রভাব বিস্তার করে চলে, যৌনসঙ্গমকালে নারীরা যথাসম্ভব নিস্ক্রিয় থাকতে চায়, তারা চায় এ বিষয়ে পুরুষরাই যথাসাধ্য তাদের শক্তি ও উদ্যমের অপচয় ঘটিয়ে নিঃস্ব হয়ে ওঠুক। এইভাবে তাদের মধ্যে এক অতৃপ্তিতে বাঁচিয়ে রেখে তাদের যৌণসম্পর্ককে দীর্ঘায়িত করতে চায় নারীরা। এভাবে তাদের এক নিগুঢ় উদ্দেশ্য পূরণের যন্ত্রে পরিণত হয়ে ওঠে পুরুষরা।
এই আধা কুমারীর ব্যাপারটা সম্বন্ধে বাপ্পাও কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বলতে পারেনি। কারণ সে যেমন ঝুমুর সঙ্গে ছিল বিশেষভাবে অন্তরঙ্গ, অন্যদিকে তেমন কোনো অন্তরঙ্গ ছিল না ঝুমুর সঙ্গে। মনের দিক থেকে তারা দুজনই ছিল পরস্পরের খুব কাছাকাছি, দুজনে দুজনের গভীরভাবে অন্তরঙ্গ, কিন্তু দেহগত সম্পর্কের দিক থেকে তাদের মধ্যে মনের যোগাযোগ দুজনে দুজনের গভীরভাবে অন্তরঙ্গ, কিন্তু দেহগত সম্পর্কের দিক থেকে তাদের মধ্যে কোনো যোগযোগ ছিল না। দেহের দিক থেকে তারা ছিল পরস্পর থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন। মনের দিক থেকে এত অন্তরঙ্গ হয়েও তাদের মধ্যে কোনো দেহগত সম্পর্ক না থাকায় দেহগত আনন্দের ব্যাপারে কোনো কথা তুলতে পারত না, তুলতে দারুন একটা দ্বিধাবোধ করত তারা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”